মন্ডপগুলোতে বাজছে দেবী দূর্গার বিদায়ের সুর

বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়েই আজ শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। শিদুর খেলা, আরতি, শোভা যাত্রাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই হবে প্রতিমা বিসর্জন। অশ্রুসজল চোখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিদায় দেবেন দেবী দূর্গাকে। ভাঙবে সনাতনদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা। বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্যি-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিজয়ার শোভাযাত্রা।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) নগরীর পূজা মন্ডপগুলোতে দেখা যায় এমনই চিত্র। বিসর্জনের ক্ষণ এগিয়ে আসায় ভক্তদের মনে ছিল বিদায়ের সুর। গতকাল দুপুরের আগেই মহানবমী ও বিজয়া দশমীর পূজা শেষে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভক্তরা চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন। এরপর বিভিন্ন মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা দর্শন করে ভক্তরা, প্রার্থনা করেন দেশও বিশ্ববাসীর মঙ্গলের জন্য। ছোট ছোট দলে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মণ্ডপে আসছিলেন, মাকে প্রণাম ও প্রার্থনা করে পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ নিয়ে অন্য কোনো মণ্ডপের উদ্দেশে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাউন্ড সিস্টেমে দুর্গাপূজাকে ঘিরে তৈরি বিভিন্ন গান বাজছিল।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার নারায়ণগঞ্জের মোট ২১৪টি পূজা মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। স্বাভাবিক নিরাপত্তার পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

জেলা নৌ-পুলিশ সুপার আলমঙ্গীর হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ নিয়ে আমাদের মোট ১২ টি থানা-ফাড়িঁ আছে। সেখানের পুলিশেরা তো দায়িত্বে থাকবেই, তাদের সাথে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। শান্তিপূর্ন ভাবেই পূজার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করছি।

জেলা বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি শিপন সরকার বলেন, দুপুরের পর থেকে বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী সন্ধ্যার মধ্যে বিসর্জন শেষ করা হবে, তবে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সব সময় পূজা কিছুটা বেতিক্রম ভাবেই উদজাপন করে থাকি। প্রতিমা বিসর্জনে হয়তো কিছুটা দেরি হতে পারে। যেহেতু নারায়ণগঞ্জে হিন্দু-মুসলিম সকলে সংঘবদ্ধ হয়েই কোন উৎসব পালন করি, সেই সুবাদে আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। কিছু জায়গাও আজ ও দশমীর পূজা হচ্ছে। বিষর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে সময় লাগবে। নারায়ণগঞ্জের প্রধান তিন টি জায়গায় প্রতিমা বিসর্জন হবে। নারায়ণগঞ্জ ঘাট (৫নং ঘাট), বন্দর ঘাট ও ফতুল্লাহ ঘাট। এ ছাড়াও যারা আছেন তারা নিজেস্ব জলাশয়ে বা পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে থাকেন।

এদিকে তিথি অনুযায়ি, শনিবার একই দিনে মহানবমী ও বিজয়া দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে প্রথমে মহানবমীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হয়। ওই পূজা শেষেই দশমীর লগ্ন হওয়ায় সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে করা হয় বিজয়া দশমী বিহিত পূজা ও দেবীর দর্পণ বিসর্জন। তবে গতকাল নবমীর দিন হওয়ায় আজ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *